গৌরনদীতে একটি কলেজের বয়স একশ বাইশ বছর অধ্যক্ষের মাসিক বেতন একশ সত্তর টাকা

0
(0)

স্টাফ রিপোর্টার:
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত বাকাই গ্রামে অবস্থিত “বাকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ” এর বয়স ১ শ ২২ বছর আর এ কলেজের অধ্যক্ষের বেতন মাসে ১৭০ টাকা অবিস্বাশ্য এই বেতন তুলতে লাগে আবার এক বছর। কলেজটিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে আছেন ২৪০ জন শিক্ষার্থী । বর্তমানে কলেজটিতে অধ্যক্ষসহ ৩ জন শিক্ষক ও ১ জন অফিস সহকারী কর্মরত রয়েছেন। এই সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি ১২২ বছরেও।
জানাগেছে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত পন্ডিত হরি গোবিন্দ রায় চৌধুরী ১২২ বছর পূর্বে ১৩০০ বঙ্গাব্দে (১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ) নিজের ১ একর ১০ শতক জমির উপরে নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন “বাকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ”।
বর্তমানে কলেজে পড়ানো হয় কাব্য, ব্যাকরণ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, পুরাণ, পুরোহিত্য ও স্মৃতি শাস্ত্রসহ ৬টি বিষয়ে। প্রত্যেক বিষয় ৩ বছর মেয়াদে শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন করতে হয়। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক সনদপত্র নিয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই। চলতি শিক্ষাবর্ষে ২৪০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহন করছেন। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোডের অধীনে পরিচালিত এ সব কর্মরত শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন দেখলে অবাক লাগে।
বাকাই নিরঞ্জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পার্থ সারতি হালদার জানান দেশের সংস্কৃত কলেজ শিক্ষকদের অমানবিক জীবনযাপনের বিষয়টি অধিকাংশ লোকের অজানার কারণে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য। এই কলেজে কর্মরতদের নেই কোন বেতন-ভাতা। তারা শুধু পেয়ে আসছেন মহার্ঘ ভাতা। বরিশাল বিভাগের একমাত্র কলেজ গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত বাকাই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত “বাকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ”। অথচ এই কলেজে অধ্যয়ন করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করে সম্মানসূচক ডিগ্রী গ্রহণ করে অনেক পেশার লোকজন। যাদের নামের পূর্বে সম্মানের সাথে সংযুক্ত করা হয়- আচার্য, পন্ডিত, শাস্ত্রবিদ ইত্যাদি। একই ক্যাম্পাসে রয়েছে মাধ্যমিক ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আর্থিক সচ্ছলতা আর সংস্কৃত কলেজে কর্মরতদের আর্থিক অবস্থার বিপরীত চিত্র চড়ম বৈষম্য বললে অন্যায় হবে না। এলাকার ৮০ বছর বয়সের প্রবীন শিক্ষক অরুন কুমার বাড়ৈ জানান সনাতন ধর্মের বিকাশের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা কলেজের অবকাঠামোসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর কোন রকমে গড়ে তোলা হয় কলেজ অবকাঠামো। ২০০১ সালে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ থেকে ৩ তলার একটি ভবন নির্মান করে দেয়া হয়। ওই ভবনেই চলছে শিক্ষাসহ আবাসনের কাজ। আজ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোন আলাদা ছাত্রাবাস হয়নি। অথচ ছাত্রবাসে থেকেই শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন করার কথা । সারাদেশে হাতে গোনা কয়েকটা কলেজ থাকলেও কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এর পাঠ্য বই পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায় না। বই সংগ্রহ করতে হয় ভারত থেকে।
এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য বিপ্লব কুমার চৌধুরী বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তিরা শিক্ষার্থী হিসেবে সনদ গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের কথা আর মনে রাখেন না। প্রতিষ্ঠানের কথা মনে রেখে একটু প্রচেষ্টা চালাত তাহলে হয়ত কলেজ ও কলেজের কর্মজীবীদের ভাগ্যের কিছু পরিবর্তন হইত।
গতকাল চরম ক্ষোভ আর আপসোস নিয়ে অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরী বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন করছি অর্থনৈতিক দৈন্য দশার মধ্যেও এই কলেজে চাকুরী করছি কেননা পূর্ব পুর্বপুরুষেরা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছেন সমাজের হিতের জন্য। তাই তাদের সেই মহৎ চিন্তা চেতনার প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন অনেক পন্ডিতরাই চান না যে সংস্কৃত কলেজের উন্নয়ন হোক। অবশ্য এর পিছনের কারণ তিনি বলেননি।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.