ব্রাদারহুড মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসির ইন্তেকাল

 

সবুজবাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্কঃমিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর পর দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আস-সিসি ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।

সোমবার (১৭ জুন) ৬৭ বছর বয়সী মুহাম্মাদ মুরসি দেশটির আদালতের এজলাসেই ইন্তেকাল করেন।

মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে কথা বলতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ সময় তিনি বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। এক পর্যায়ে তিনি হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

খবরে বলা হয়, মুরসির লাশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মুরসির ছেলে আহমদ নাজাল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লেখেন, আমার পিতা আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে আরব বসন্তের জেরে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে বিশাল গণঅভ্যুত্থান। এতে পদচ্যুত হন হোসনি মোবারক।

এরপর মিসরের প্রথম অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ব্রাদারহুডের মুরসি। কিন্তু ২০১৩ সালে গণঅসন্তোষের সুযোগ নিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরীয় সেনাবাহিনী। পরে প্রেসিডেন্টের মসনদে বসেন মুরসির হাতে সেনাপ্রধান হওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।

২০১৩ সালে মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ করা হয়। এর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অর্থের বিনিময়ে কাতারের কাছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার করেছেন।

২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের জুন মাসে তথ্য পাচারের এ মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন নিম্ন আদালত। আদালত দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচারের অভিযোগে মুরসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর পর দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আস-সিসি ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।

তিনি বলেছেন, মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিসি জনগণের ভোটে নির্বাচিত মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেছেন ও গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছেন এবং ক্ষমতায় এসে ৫০ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন।

 

 

এরদোগান বলেন, মুরসি গণতান্ত্রিক উপায়ে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী এই বাস্তবতা মেনে নেয়নি এবং তারা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার সব ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছিল।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করে বলেন, সিসি ক্ষমতায় আসার পর মিশরীয়দের ফাঁসি দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে নীরব থেকেছে এমনকি মিশরে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইউরোপীয় দেশগুলো অংশ নিয়েছে যখন সেখানে ফাঁসির ঘটনা ঘটছিল।

এরদোগান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্ককে ফাঁসির আদেশ বাতিলের জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছে কিন্তু মিশরে তারা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এমন সময় অংশ নিয়েছে যখন সে দেশের নাগরিকদেরকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছিল। আর এ থেকে প্রমাণিত হয় ইউরোপ মানবাধিকার বিষয়ে দ্বিমুখী আচরণ করছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি তার হাজার হাজার বিপ্লবী সমর্থককে নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন কিন্তু পাশ্চাত্যের কেউ তার পক্ষে কথা বলেনি। মোহাম্মদ মুরসি গতকাল মিশরের আদালতে বিচার চলাকালীন সময়ে মারা যান। গত ৭ মে তিনি আদালতে বলেছিলেন তার জীবন হুমকির মুখে। ছবি : সংগৃহীত