হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব (তৃতিয় পর্ব)

0
(0)

((মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ))
= পূর্ব প্রকাশের পর t হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব। তারঁ গোটা জীবন-ই আমাদের জন্য ইসলামী জেন্দেগী গঠনের এক অনন্য পাথেয়। হুজুর কেবলা (রহ.) যেমন ছিলেন একজন কামেল মুর্শিদ, ওলী, দরবেশ, সূফী সাধক ও আধ্যাত্মিক নেতা, তেমন ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, লেখক ও সংগঠক।প্রজ্ঞায়, পান্ডিত্বে. আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শবাদিতায়, সততায়, নিষ্ঠায়, উদারতায়, আমলে, আখলাকে তারঁ মত একজন মহত মানুষ সত্যিই বিরল। তারঁ জীবন ও কর্মই তাঁর বাস্তব প্রমান।
মাতা পিতার পরিচয় ঃ
হুজুর কেবলা এক সম্ভ্রান্ত ও প্রখ্যাত আলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভি মফিজুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন দ্বীনের একনিষ্ঠ খাদেম। মৌলভী ছাহেব নামে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তিনি সফরে গিয়ে রাতে ওয়াজ করতেন এবং বাদ ফজর ঐ এলাকার গন্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে ডেকে শিরক, বিদআত, সুদীকারবার ও সমাজ বিরোধী ও অশ্লীল কার্যকালাপে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদের বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে তাদের হাজির করতেন। তিনি তাদেরকে এসব গর্হিত কাজ ছেড়ে দেয়ার জন্য বলতেন এবং তওবা করিয়ে দিতেন। প্রয়োজনে তিনি এসব অপরাধীর সমাজিক ভাবেও বিচার আচার করতেন। সামাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁকে খুব মান্য করতেন এবং তাঁর সব ফয়সালা মেনে নিতেন। অপরাধীদের দমনের ব্যপারে তারা তাঁর সর্বিক সহযোগিতা করতেন। মৌলভী ছাহেব (হুজুরের আব্বা) ছিলেন হাজী শরীয়তউল্লার উত্তরসূরী। হযরত রশীদ উদ্দিন আহমদ ওরফে পীর বাদশাহ্ মিয়ার একজন খলিফা। খেলাফতির সনদ হিসাবে তাঁর কাছে পিতলের পাত্রের উপর লিখিত একটি সনদ নামা ছিল।

শৈশব ও বাল্যকাল ঃ

হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) জন্মগত ভাবেই আাল্লাহর ওলী ছিলেন। তাঁর শৈশব ও বাল্যজীবনে বেলায়েতের বহু আলামত প্রকাশ পেয়েছিল। শৈশব ও বাল্যজীবনে সাধরনত:মানুষ একটু চঞ্চল থাকে। কিন্তু হুজুর কেবলার জীবনে এ চাঞ্চল্য কখন পরিলক্ষিত হয়নি। বাল্যকালে যখন হুজুর পাঠশালায় পড়তেন তখন তিনি কোন দিন কোন বালকের সাথে অহেতুক ঝগড়া বিবাদ ও খেলধূলায় লিপ্তহননি। তিনি সবার সাথে সুন্দর আচারন করতেন। তাঁর আচারনে সবাই তাঁর প্রতি ছিল মুগ্ধ। বাল্য জীবনের একটি ঘটনা, তখন বর্তমান সময়ের মত গ্রামে এত ফোরকানিয়া মাদরাসা বা মক্তব ছিলনা। বিভিন্ন বাড়ীর কাচারিতে পাঠশালা চলতো। সেখানে এলাকার বালক বালিকারা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতো। হুজুর কেবলার বাড়ীর কাচারিতে ও অনর”প একটি পাঠশালা ছিল। হুজুর সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। নীকুঞ্জ নামে এক হিন্দু ভদ্রলোক পাঠশালার শিক্ষক ছিলেন। তিনি হুজুরকে খুব ¯েœহ করতেন। এ ¯েœহের কারন সর্ম্পকে হুজুর কেবলার বোনের কাছে একটি ঘটনা শুনেছি। হুজুরের পাঠশালার শিক্ষক নীকুঞ্জ বাবু খুব পান খেতেন। একদিন তিনি ছাত্রদেরকে বললেন “তোমারা আগামী কাল আমার জন্য কিছু সুপারি নিয়ে আসবে”। শুধু এতটুকু কথা বলেই তিনি চলে গেলেন। পরদিন কোন ছাত্রই সুপারি নিয়ে আসেনি। আর গুর”মহাশয় নীকুঞ্জ বাবুও সে কথা ভূলে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে সবাই চলে গেল। গুর” মহাশয় দেখতে পেলেন, বালক আযিযুর রহমান দরজার এক পার্শ্বে একটি পুটলি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গুর”মহাশয় জিজ্ঞাসা করলেন, সোনা মনি! তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? হুজুর বিনয়ের সাথে জবাব দিলেন, গুর”মহাশয়! আপনার জন্য কিছু সুপারি নিয়ে এসেছি। গুর”মহাশয় অবাক দৃষ্টিতে হুজুরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সুপারি গুলো গ্রহণ করে হুুজুরের মাথায় হাত বূলিয়ে তিনি বললেন “সোনা মনি! ঈশ্বর তোমাকে দীর্ঘায়ু কর”ন। তোমার জন্য আর্শিবাদ করি, তুমি যেন সেরা মানুষ হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি লাভ করতে পার”। বাল্য বয়সেই ওস্তাদ ভক্তির কী অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হুজুর কেবলা। গোটা সৃষ্টি জীবের প্রতি হুজুরের যে কত দরদ ছিল তা তাঁর বাল্য জীবনের একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়। একবার বন্যার পানিতে হুজুরের বাড়ীর চার পাশ ডুবেগেল। বাড়ীর বালকেরা ভরা পানিতে নেমে দৌড়া দৌড়ি করতেছিল। এসময় হুজুরকে দেখাগেল, তিনি হাঁটু পানিতে নেমে পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া পিপড়া গুলো উপরে তুলে দিচ্ছেন। সেদিন হুজুরের এ কাজ দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে ছিল। হুজুর ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খুব লাজুক। ছোট বেলায় বালকেরা সাধারণত হাফপ্যান্ট পরে চলাফেরা করে থাকে। কিন্তু হুজুরকে কেউ কখনও হাফপ্যান্ট পরতে দেখেনি। হুজুর ছোট বেলায়ও সর্বদা লুঙ্গী পরিধান করতেন। একবার হুজুর কেবলা তাঁর আব্বার সাথে মামা বাড়ী বেড়াতে গেলেন। তখন হুজুরের বয়স ছিল ০৫/০৬ বছর। হুজুর মামা বাড়ীতে গিয়ে দেখতেপেলেন, তাঁর মামার ঘরের মধ্যে কতগুলো সোলার (হালকা ও নরম কাঠ বিশেষ) নির্মিত পাখী সাজানো রয়েছে। হুজুর এক ফাঁকে এই পাখীগুলোর প্রতিটির কল্লা ছিড়ে ফেললেন। এর পরে হুজুর মামা বাড়ীতে কোন ভাবেই আর থাকতে চাইলেন না। বাধ্য হয়ে হুজুরকে নিয়ে তাঁর আব্বা বাড়ীতে চলে আসলেন। এই ঘটনায় তখন সবাই বুঝতে পারছিলেন যে, এই বালক-ই ভবিষ্যতে একদিন শিরক ও শরীয়ত বিরোধী কার্যকালাপের বির”দ্ধে কঠোর প্রতিবাদী হবেন। আর হয়েও ছিলেন তাই। তথ্য সূত্র নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্ট ঝালকাঠি। চলবে

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.