১০৮ বছরেও পিয়ানোয় সুর তোলেন মিস ওয়ান্দা

সবুজবাংলা ডেস্ক: ৮০ বছর বয়সে হাত ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন আর কোনওদিন পিয়ানো বাজাতে পারবেন না বৃদ্ধা। কিন্তু শখের জিনিস, নিজের প্যাশনকে এ ভাবে বিসর্জন দিতে হবে, সেটা মেনে নিতে পারেননি ওয়ান্দা জারজায়ককা। মনের জোর নিয়ে নিজেকেই দিয়েছিলেন একটা চ্যালেঞ্জ। যাই হয়ে যাক পিয়ানো বাজানো কিছুতেই ছাড়বেন না।

আর মনোবলের জেরেই ১০৮ বছর বয়সেও পিয়ানোর রিডে সাবলীল ভাবে হাত চলে ওয়ান্দার। হাতের চামড়া কুঁচকে গিয়েছেন। বলিরেখা দেখা দিয়েছে মুখেও। বয়সের ভারে একটূ যেন নুইয়েও পড়েছেন। কুছ পরোয়া নেই। এজ ইজ জাস্ট এ নাম্বার এই আদর্শে বিশ্বাসী ওয়ান্দা। রোজ নিয়ম করে তাই পিয়ানো বাজানো চাই ই চাই। আজও অনায়াসেই তিনি বাজিয়ে যান নানান রোম্যান্টিক সুর। কোনওটার নোট আবার বেশ কঠিন। কিন্তু তাতে কী! ওয়ান্দা জানেন দুনিয়ায় যাই হয়ে যাক না কেন তাঁর প্যাশন থেকে কেউ তাঁকে আলাদা করতে পারবে না। যতদিন শ্বাস নেবেন ততদিন পিয়ানোর রিডে সুরের ঝঙ্কার তিনি তুলবেনই। লিভিভ-এ (বর্তমানে যা পশ্চিম ইউক্রেনে) জন্মগ্রহণ করেন ওয়ান্দা। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ছিল আলাদা একটা ভালোবাসা। আর পিয়ানোর সঙ্গে যে ওয়ান্দার একটা আত্মিক যোগ রয়েছে তা বুঝেছিলেন ওয়ান্দার পরিবারও। তাই খুব ছোট্টবেলাতেই হাতেখড়ি হয় পিয়ানোর সঙ্গে।

১৯৩১ সালে লিভিভ-এর মিউজিক কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হন ওয়ান্দা। চলতে থাকে পিয়ানো শেখাও। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথমবার পিয়ানোর সঙ্গে আপোষ করতে হয় তাঁকে। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাঁর সঙ্গীত সাধনা। পরিস্থিতির চাপে সাময়িক ভাবে এই আপোষ মেনে নিতে বাধ্য হন ওয়ান্দা। প্রায় ৫ বছর পিয়ানোর থেকে দূরে ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৪৪ সালে লিভিভ থেকে পোল্যান্ডের ক্রাকো-তে চলে আসে ওয়ান্দার পরিবার। নতুন জায়গায় এসে নিজের পিয়ানো ফিরে পান ওয়ান্দা। ফের শুরু হয় সঙ্গীত সাধনা।

এখন পোল্যান্ডের অন্যতম পুরনো এবং ট্যালেন্টেড বাসিন্দা এই মিস ওয়ান্দা। ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস তাঁর। গান আর ঈশ্বরের সাধনা নিয়েই দিন কাটে তাঁর। বয়স যে কেবল একটা সংখ্যা, আর কিচ্ছু নয়, সেটাই আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন ১০৮ বছরের ওয়ান্দা। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি একজন অনুপ্রেরণা। মিষ্টি হেসে ওয়ান্দা বলেন, “ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। বয়স কেবল একটা অজুহাত। আমি পেরেছি। বাকিরাও চেষ্টা করলেই নিজেদের স্বপ্ন সফল করতে পারবেন।”