৫টা ময়ূর পরিচর্যা পেয়ে এখন তারা ৫০

সবুজবাংলা ডেস্ক: ভারতের বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল। তারই লাগোয়া চা বাগান। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চা বাগানে ঢুকে পড়েছিল চার পাঁচটা ময়ূর। সেখান থেকে আর জঙ্গলে ফেরা হয়নি তাঁদের। চা শ্রমিকদের কড়া পাহারা আর পরম মমতায় তাদের সংখ্যা এখন ৫০ ছাড়িয়েছে। মাঝখানে কেটে গেছে চার থেকে পাঁচ বছর।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে দেশের অন্যতম সেরা চা বাগান ডেঙ্গুয়াঝাড়। চা গাছের ফাঁক দিয়ে পায়ে চলা পথে এগোলেই দেখা হয়ে যায় তাদের সঙ্গে। মেঘ কপালে না থেকে আকাশে থাকলে পেখমের রামধনু রঙও ধরা দেয় নাগালে। ময়ূরের ডিম কুড়িয়ে এনে মুরগির ডিমের সাথে তা দিয়ে ছানা ফুটিয়ে চড়া দামে পাচারের অভিযোগ হামেশাই ওঠে যাদের বিরুদ্ধে সেই চা শ্রমিকদের লালনেই চা বাগানের অন্দরে লাফিয়ে বাড়ছে ভারতের জাতীয় পাখির সংখ্যা।
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার দিকবিজয় শর্মা বলছিলেন, “জানেন, একদিন বাগানে আগাছা সাফাইয়ের কাজ করাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাগানের নির্দিষ্ট এক জায়গার আগাছা কিছুতেই সাফাই করতে চাইছিল না এক শ্রমিক। একাধিকবার জিজ্ঞাসা করায় আমাকে নিয়ে গিয়ে দেখালো যে ঝোপের ভেতর একসাথে রয়েছে ময়ূরের চারটি ডিম। বারবার বলতে লাগলো, এই আগাছা সরাতে গিয়ে ময়ুরের বাসা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সত্যি, আমি অবাক হয়ে গেছিলাম। পরে দেখলাম ও একা নয়, আরও অনেকেই এমনটাই সতর্ক।”
তিনিই জানালেন, বছর চার পাঁচ আগেকার কথা। পাশের বৈকন্ঠপুর জঙ্গল থেকে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে ঢুকেছিল চার পাঁচটি ময়ূর। দেশের সেরা চা বাগানের পরিবেশ বান্ধব পরিবেশ কোনও ভাবে হয়তো ভালো লেগে গিয়েছিল ময়ূরের দলটির। তারা স্থায়ী আস্তানা গেড়ে ফেলে এই বাগানেই।
ময়ূর আসার খবর গিয়েছিল চা বাগানের ম্যানেজারবাবুর কাছে। কোনও ভাবেই যাতে তাদের ক্ষতি না হয় সেই মর্মে জারি হয় বাবুর কড়া নির্দেশ। তাই এখন মাঝে মাঝেই চা বাগানের ভেতর ঝোপের পাশে দেখা যাচ্ছে ময়ূরের ডিম। সবার অতি সতর্কতায় মাত্র ৫ বছরে ময়ূরের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে।
চা বাগানের চৌকিদার জহরলাল ওঁরাও বলছিলেন, “একদিন এই এলাকা পাহারা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ বন থেকে হাপা (বন বেড়াল) এসে ওই ঝোপে হামলা চালালো। একটি ময়ুর ও সাথে ৩ টি ডিম খেয়ে ফেলল। মুহূর্তের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে গেল। কিছুই করতে পারলাম না আমি। এখন তাই খুব সজাগ থাকি।”
চা শ্রমিক ললিত ওঁরাওয়ের কথায়, “চা বাগানে অনেক লোক বেড়াতে আসে। ছবি তোলে ওদের। কিন্তু কাউকে ওদের কাছে যেতে দেই না আমরা। ছেলে মেয়ের মতো করেই রাখি ওদের।”
কখনও লাফিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে কিংবা চা বাগানের মেঠো পথ ধরে ছানা পোনা নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়ূরের দল। ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে এখন নিত্যই নজরে আসে এমন ছবি। ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার জীবনচন্দ্র পান্ডে জানান, জঙ্গল লাগোয়া হওয়ায় এই বাগানে অনেক রকম বন্যপ্রাণীর যাতায়াত। বাগানের শ্রমিক কর্মচারিদের প্রত্যেককে নিয়মিত বন্যপ্রাণ সম্পর্কে সচেতন করেন তাঁরা। বললেন, “যতটা কম সম্ভব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় আমাদের এই বাগানে। ফলে গত কয়েক বছরে ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বাগানে যে সমস্ত জায়গায় অর্গানিক ফার্মিং হয় সেখানে ওদের যাতায়াত আরও সাবলীল।”
চা-শ্রমিকদের ময়ূর লালনের গল্প শুনে কনজারভেটর অফ ফরেস্ট নর্দার্ন সার্কেল গঙ্গাপ্রসাদ ছেত্রী বলেন, “আমি খুব তাড়াতাড়ি ওই চা বাগানে আমাদের আধিকারিকদের পাঠাবো। যদি সত্যি এই ঘটনা হয়ে থাকে এই ভালো কাজের জন্য আমরা ওদের পুরস্কৃত করবো।”
স্বীকৃতি পেলে অবশ্যই ভাল লাগবে, কিন্তু ময়ূরের সংখ্যা আরও বাড়লে তা ছাপিয়ে যাবে সব আনন্দকে। বলছে ডেঙ্গুয়াঝাড়।