ইংল্যান্ডের বর্ণিল রমজান

সবুজবাংলা ডেস্ক//
ইউরোপে ফ্রান্সের পর ইংল্যান্ডেই সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করে। প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করে দেশটিতে, যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। ধারণা করা হয়, আগামী ১০ বছরে ইংল্যান্ডে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলিমদের ভেতর বেশির ভাগই অভিবাসী। প্রায় ৫৫টি দেশের মুসলিমরা সেখানে বসবাস করে। তবে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত মুসলিমদের সংখ্যাও একেবারে নগণ্য নয়। মুসলিমরা পুরো ইংল্যান্ডেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তবে রাজধানী লন্ডনেই তাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
ইংল্যান্ডের মুসলিমরা দীর্ঘ সময় রোজা রাখে। কখনো কখনো সাড়ে ১৮ ঘণ্টাও রোজা রাখে তারা। সেখানে ফজর হয় রাত আড়াইটায় এবং সূর্যাস্ত হয় রাত ৯টায়। এর পরও ব্রিটেনের মুসলিমরা আনন্দের সঙ্গেই রোজা রাখে, যদিও মুসলিম দেশের মতো তারা রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে আনন্দ প্রকাশ করতে পারে না। এর ব্যতিক্রমও আছে। মুসলিম অধ্যুষিত কিছু এলাকায় মসজিদ, রাস্তা ও বাড়িঘর সাজানো হয় এবং সেখানে আলোকসজ্জা করতেও দেখা যায়। ফানুস উড়িয়ে স্বাগত জানানো হয় পবিত্র রমজানকে।
ইংল্যান্ডে মুসলিমরা যেহেতু বিভিন্ন দেশ ও সমাজ থেকে এসেছে, তাই ব্রিটিশ মুসলিমদের রমজান উদ্যাপনে আছে বৈচিত্র্য। অভিবাসী মুসলিমরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী রমজান উদ্যাপন করে। প্রবাসেও তারা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অত্যন্ত যত্নবান। তবে কিছু ক্ষেত্রে অভিন্ন রীতিও চোখে পড়ে। যেমন—দল বেঁধে মসজিদে যাওয়া, সম্মিলিত ইফতার ও তারাবি, ফজরের নামাজে মসজিদে উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি।
রমজানে ব্রিটেনের মসজিদগুলোতে কোরআন শিক্ষার আসর হয়। সেখানে কোরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, তাফসির ও ধর্মীয় বিধি-বিধান শেখানো হয়। বিশেষ বিশেষ মসজিদে ইতিকাফের ব্যবস্থা থাকে। সেখানে জিকিরের মজলিসও হয়। আবার অস্থায়ীভাবে কিছু কমিউনিটি রেডিও চালু করা হয় এ সময়। প্রায় সব বড় শহরেই রেডিও সেবা চালু হয়। এসব রেডিওতে রমজানজুড়ে ইসলামী বিধি-বিধান, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে আলোচনা হয়। কোরআন তিলাওয়াত, কোরআনের তাফসির ও আজান সম্প্রচার করা হয়। মসজিদে কমিউনিটিভিত্তিক দ্বিনি আয়োজনও চোখে পড়ে তখন। প্রতিটি কমিউনিটি নিজ নিজ দেশের বিশিষ্ট আলেমদের আমন্ত্রণ করে আনে এবং তাঁদের সান্নিধ্যে থেকে ধর্মীয় বিধি-বিধান শেখে। তারাবির নামাজের জন্যও নিজ নিজ দেশ থেকে হাফেজ নেয় তারা।
ইংল্যান্ডে রমজানে মুসলিম চাহিদা পূরণে বিশেষ উদ্যোগ থাকে ব্যবসায়ীদের। বিশেষত আরবের খেজুর, হালাল গোশত, ফল, চাল, ডাল ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করে তারা। টিভিতে তারা মুসলিম ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিজ্ঞাপনও প্রচার করে। এ ছাড়া হোটেল ও রেস্টুরেন্টেও মুসলিম গ্রাহকদের জন্য থাকে বিশেষ আয়োজন। সাহরির সময়ও রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে কোনো কোনো এলাকায়।
একসঙ্গে ইফতার করা ব্রিটিশ মুসলিমদের একটি ঐতিহ্য। পরিবারের সবাই মিলে এবং মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টারে একত্রে ইফতার করে তারা। ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে প্রায় ৫০০ মসজিদ ও দ্বিনি মারকাজ রয়েছে। তাই ইফতার-সাহরি ও তারাবির সময় এই শহরের দৃশ্য দেশটির অন্য যেকোনো শহর থেকে সুন্দর ও মনোরোম। রমজানে ইংল্যান্ডে বিয়েসহ পারিবারিক ও ধর্মীয় অনেক অনুষ্ঠান হতেও দেখা যায়। রমজানের বরকত লাভের জন্যই তারা তা করে।
আবরার আবদুল্লাহ
(সৌজন্যে বহুল প্রচারিত দৈনিক কালের কন্ঠ)