আই বুড়ি // কবি জিয়াউল হক

প্রেম করতে সবাই আসে,
বিয়ে করতে কেউ আসে না!
ফুল নিতে সবাই আসে
জল দিতে কেউ আসে না।
বাইশ বছর পূর্ণ হলো না-
কত অলি নিশীথ আনমনে নিকুঞ্জ বনে এলো,
কত নাগর এলো চন্দ্র তিথিরক্ষণে,
কেউতো এলোনা ঘর বাঁধতে সঙ্গোপণে।
ফুল ফুটেছে দেখেই যেন সবার চক্ষু টাটায়,
ঘ্রাণ শুঁকে যায়, হাত দিয়ে ছোঁয়,
জল দিতে সব ছুটে পালায়।
বাসী ফুলে হয় যাত্রা নষ্ট
এমনি প্রবাদ কত শোনায়।
আমরা নারী, আমাদেরও যে মন আছে-
এ কথা কেউ- ই বুঝল না,
চাতকিনী হয়ে পথ চেয়ে আছি
কেউ-ই-তো বর সাজল না!
গোঁফ ওয়ালারা গোঁফ কমিটি নিয়ে
শুধুই ফুর্তি করে,
আমরা যে আছি গোঁফ ছাড়া জাত
হিসেব কি কেউ করে?
কতো পুরুষ এলো গোঁফ ওয়ালা- ঁেগাফছাড়া,
কতোজনে এলো লিকলিকে দোহারা;
কালো গোঁফ নিয়ে দিল কত মহড়া,
পাত্তা দেইনি, দেইনি কখনও ধরা।
গোপনে সেরেছি সিথীর সিঁদুর পড়া
প্রাণের পুরুষ আজও তো দিল না ধরা।

ভর্তি হলাম ষোড়শী তম্বী হয়ে,
বেরিয়ে যাব আইবুড়ি নাম নিয়ে
নাগর তখন আসবে কোথা থেকে?
কচি খোকাও যে বসবে অমনি বেঁকে!
আসবে হয়তো ত্রিশোর্ধ অফিসার;
আমলা নয়তো কলেজের লেকচারার।
বুড়ো বুড়ি মিলে বেঁধে নেব সংসার,
যৌবন নিয়ে যুদ্ধ হবে না আর।
ক্যাম্পাসে ঘুরি প্রচÐ দাপটে,
‘এই আপা’-বলে সবাই চিমটি কাটে।
আইবুড়ি বলে সবাই হাসে!
আসল কথাটি কেউ বলে না।
প্রেম করতে সবাই আসে
বিয়ে করতে কেউ আসে না।

আই বুড়ি কবিতার আলোচনাঃ কবি জিয়াউল হক বিরচিত আই বুড়ি কবিতার অনুষঙ্গে রয়েছে বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পড়–য়া যুবক যুবতীদের বাস্তব জীবনের যৌবনিক পরস্পর আকর্ষণ-বিকর্ষণ ও বাক্যবাণ।
মেয়েদের কাছে এসে পাশে বসে কথা বলার বাসনা পুরুষের জাতগত স্বভাব। একথা সত্য যে,
“সব পুরুষের একই হাক
সব শিয়ালের একই ডাক।”
ক্ষণিকের মোহে পুরুষ মেয়েদের কাছে প্রেম করতে আসে; কিন্তু বিয়ে করতে রাজি নয়। তারা ফুল দিয়ে মন চাঙ্গা করতে আসে; কিন্তু ভালোবাসা দিতে আসেনা। তুঙ্গ যৌবনা যুবতীদের এখনও বাইশ বছর পূর্ণ হয়নি। ইতোমধ্যেই অনেক রসের ভ্রমরা নাগর এসে প্রেম প্রণয়ের অভিসার প্রস্তাব দিয়েছে; কিন্তু তারা আদিরস পান করতে এলেও বিশেষভাবে বহন করতে নারাজ। মেয়েদের দেখলেই তারা গুণগুণিয়ে গান গেয়ে আঙ্গবিদ্রোহ ভাব দেখিয়ে, আয় কাছে আয় শরীর ঘেসে বসে। কাছে এসে শরীর ঘেসে বসে ঘ্রাণ নেয়। শরীরে পরশ লাগায় চুমো দিতে চেষ্টা করে, সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু বিয়ে করতে রাজি হয়না।
তারা মেয়েদের শুনিয়ে বলে ওরা বাসী ফুল, ভাবি ভাবি চেহারা। ওরা আইবুড়ি হয়ে গিয়েছে।
মরদদের মদিরায় মেয়েরা চাতকীর মত জল চেয়ে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তারা তা বুঝেও বোঝেনা। পড়–য়া যুবকদের কেউবা গোফ রেখে এর কমিটি করে ফূর্তির ফোয়ারা ঢেলে মেয়েদের দেখায়। গোফ ছাড়া যুবকগণও মিট মিটিয়ে তাদের চোখে চোখ রাখে।
লিকলিকে, স্বাস্থবান, বেটে লম্বাটে নানান ধরণের পড়–য়া যুবকগণ যুবতীদের বুকে চোখে তাকিয়ে মজা লোটে। কিন্তু মেয়েরা তাদের ফন্দির ফাঁদে পড়েনা। যৌবনিক অভিব্যক্তিতো চেপে রাখা যায়না। বিয়ের আগেই সিঁথির এয়োতি অর্থ্যাৎ মৈথুনেচ্ছা হওয়া স্বাভাবিক। তাই আদোল মাধবীর অমল অনুরাগে মনের খায়েস মিটাতে মাস্টারিবিউসনে চরিতার্থ করতে বাধ্য হয়েছে। ভাঙ্গা মনকে চাঙ্গা করার পুরুষ আজও খুজে না পেয়ে, তারা আনমনে স্বাস্থ্য ষোড়ষী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল আর বুড়িয়ে এখান থেকে চলে গেল। সম বয়সী নাগর কোথা থেকে আসবে? কচি স্বামী আর জোটবেনা। ত্রিশোর্ধ কোন অফিসার বা লেকচারার হয়তোবা কপালে আছে। থাকগে, যৌবনিক চাপতো আর থাকবে না।
বুড়ো-বুড়ি দুজনেই সংসার গড়ব। ক্যাম্পাসে দম্ভে ঘোরা ফেরা করে আপা বলে চিমটি কাটে, আইবুড়ি বলে কেউবা মুচকি হাসে। এরপরও বখাটে দুষ্ট যৌবন ভোগের জন্য চোখে চোখ রেখে ঈশারায় ডাকে; কিন্তু বিয়ে করতে আসেনা। কবি জিয়াউল হকের আইবুড়ি কবিতাটির রস বিচারে শৃঙ্গার রসের কবিতা।
ভাব বিচারে এতে রয়েছে বিভাব এবং এর আলাপ রুপে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া যুবতীদের মনের চাহিদা- “প্রেম করতে সবাই আসে, বিয়ে করতে কেউ আসেনা। এ কবিতার উদ্দীপন স্বরুপ হয়েছে- “ দুস্ট যুবকদের দে’য়া টাইটেল আইবুড়ি,
যা হাস্যোরসের আধার।”
বাস্তব জীবনের অভিব্যক্তিকে কবি যেভাবে কবিতায় মূর্তিমান করেছেন তা- প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক শ্রীশ চন্দ্র দাসের আলোকে বলা যায় যে- We can know, as experience a piece of music, picture, or a poem to be a work of art in no other way than by reacting emotionally towards it.
ভাবার্থঃ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা জানি যে, শান্তি, গীতি, চিত্র কাব্য ইত্যাদি শিল্প সত্ত¡ার কাজ অনুভূতিগত মুখস্ত করার দিকে ধাবিত।
কবি জিয়াউল হক বিরচিত আইবুড়ি কবিতার কাব্যিক সত্যই বাস্তব জীবনের অনুষঙ্গ।