কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব

0
(0)

 মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ

হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব। তারঁ গোটা জীবন-ই আমাদের জন্য ইসলামী জেন্দেগী গঠনের এক অনন্য পাথেয়। হুজুর কেবলা (রহ.) যেমন ছিলেন একজন কামেল মুর্শিদ, ওলী, দরবেশ, সূফী সাধক ও আধ্যাত্মিক নেতা, তেমন ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, লেখক ও সংগঠক।প্রজ্ঞায়, পা-িত্ব্,ে আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শবাদিতায়, সততায়, নিষ্ঠায়, উদারতায়, আমলে, আখলাকে তারঁ মত একজন মহত মানুষ সত্যিই বিরল। তারঁ জীবন ও কর্মই তাঁর বাস্তব প্রমান।

জন্মকাল ঃ
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এর জন্ম তারিখ সুনিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারেননি। ধারনা করাহয় হুজুর কেবলার জন্ম তারিখ ১৯১১, ১৯১২, বা ১৯১৪ খ্রী.। অথচ এর কোনটিও সুনিশ্চিত নয়। অধিকাংশের তথ্য মতে হুজুর কেবলার জন্ম তারিখ ১৯১৫ খ্রী.।
জন্মস্থান ঃ
১৯১৫ খ্রী. হুজুর কেবলা (রহ.) ঝালকাঠী জেলার বাসন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। হুজুর কেবলা (রহ.) যখন জন্মগ্রহন করেন তখন অত্র এলাকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি কেমন ছিল তা কিছুটা বলা প্রয়োজন। এদেশের পীর, আউলীয়া, দরবেশ ও সূফী-সাধকগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁদের জন্ম এমন এক স্থান ও পরিবেশে হয়েছে, যে পরিবেশটি ছিল সম্পুর্ন একটি ধর্মহীন পরিবেশ। সেখানে ছিলনা কোন দ্বীনী পরিবেশ, ছিলনা কোন ইসলামী তাহজীব ও তামাদ্দুম। নামে মাত্র মুসলমান থাকলেও, কাজ-কর্মে ছিল সব ইসলামপরিপন্থি। এমনি একটি দ্বীনহীন পরিবেশে এসে তাঁরা তাদেঁর আমল, আখলাক,আচার-আচারন, দাওয়াত ও তালীমের মাধ্যমে সে এলাকায় তৈরী করেছেন কিছুসংখ্যক তাঁদের ভক্ত ও মুহিব্বীন। তাদেঁর মাধ্যমেই সেখানে গড়ে তুলেছেন খানকাহ, মসজিদ,ও দ্বীনী মারকাজ। আর এগুলোকে কেন্দ্রকরেই তাঁরা সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন দ্বীনের দাওয়াত ও হেদায়েতের আলো। তাঁদের এ দাওয়াতে সাড়া দিয়ে অগনিত অসংখ্য দ্বীনহারা ও আল্লাহ হারা মানুষ পেয়েছে সঠিক পথের সন্ধান, পেয়েছে ইহকাল ও পরকালের চিরস্থায়ী শান্তির পথ। ঠিক অনুর”প ভাবেই হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর কেবলা (রহ.) যে সময় বাসন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন তখন অত্র এলাকার দ্বীনী পরিবেশ ছিল খুবই নাজুক ও দুঃখজনক। তখন বরিশাল, খুলনা, পিরোজপুর তথা দক্ষিণ বাংলার চরম দুর্দিন। ১৮৩১ সালে বিধ্বস্ত মাওলানা নিছার আলী ওরফে তিতুমরের বাশেঁর কেল্লার ধংসের সাথে সাথে নেমে আসে ইংরেজ বেনিয়া ও হিন্দু জমিদারদের অকথ্য নির্যাতন।
ঝালকাঠী ছিল প্রসিদ্ব বন্দর। তখন ঝালকাঠী বন্দরকে দ্বিতীয় কলিকাতা বলা হতো। তখনকার বড় বড় হিন্দুরা এখানে জমজমাট ব্যাবসা বানিজ্য করতো। তাদের সে বানিজ্যের স্মৃতি এখনও ঝালকাঠীতে বিদ্যামান। ঝালকাঠী শহর সংলগ্ন বাসন্ডা গ্রামটি  (যে গ্রামে হুজুরের জন্ম) ছিল প্রসিদ্ব একটি গ্রাম। হিন্দু জমিদারদের আবাসন ছিল এ গ্রামটিতে। হিন্দু জমিদারগণ হুজুকে ভালবসতেন। হুজুুরের কাজ-কর্মে, কথা-বার্তায় ও আচার-আচারনে তারা সন্তষ্ট ছিল। তারা হুজরের কোন কাজে বিরোধীতা করেনি।
এক সময় হুজুর ‘‘বাসন্ডা’’ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে নিজ এলাকার নাম ‘‘নেছারাবাদ’’ রাখলেন। হুজুর কেবলার পীর ও মুর্শিদ ছারছীনা শরীফের শাহ্ সূফী নেছার উদ্দিন আহমদ (রহ.) এর নামে এ নাম রাখাহয়। হুজুরের জন্মভূমি নেছারাবাদে (বাসন্ডায়) আজ গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকাহ সহ  ৪২ টি দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে নেছারাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্ট ঝালকাঠী।  নোছারাবাদের সুখ্যাতি আজ বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। হুজুর কেবলার কর্মময় জীবনের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত নেছারাবাদ কমপ্লেক্স। হুজুর কেবলা তাঁর জন্মভূমি ‘নেছারাবাদকে’ হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন। জন্মভূমি নেছারাবাদকে তিনি নিজ নামের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন। হুজুর কেবলাক তার পীর মুর্শিদ “কায়েদ” উপাধি দিয়েছেন। বিভিন্ন গুণীজন বিভিন্ন উপাধি দিয়েছেন। কিন্ত হুজুর কেবলার “নেছারাবাদী” উপাধিটা হুজুর নিজেই নিজ নামের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন। জন্মভূমির সাথে তাঁর হৃদয়ের সম্পর্কের এটাই  হলো এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। তথ্য সূত্র নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্ট ঝালকাঠি। চলবে

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.