আমি যাইনি কিছুই ভুলে //কবি জিয়াউল হক

আমি যাইনি কিছুই ভুলে
কবি জিয়াউল হক ২৫২, মাদার বখ্শ হল,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
২৯-১২-১৯৯৩ ইং।
তুমি রাতের জোনাকি, আমি পথ হারা, ঘন মহুয়ার বন;
তুমি আলো জ্বেলে জ্বেলে দেখিয়েছো পথ রাঙিয়েছো এই মন,
আমি যাইনি কিছুই ভুলে।
তুমি কাঞ্চন, তুমি মানিক রতন, তুমি হীরামন পাখি;
দুঃসহ এই জীবনের পথে তুমি সিরাজীর সাঁকি।
আমি যাইনি কিছুই ভুলে।
তুমি কৃষ্ণকুমারী, তমালিকা আর কঙ্কাবতীর মালা,
তুমি আমার বিরহ, শর্বরী নও, বিস্ফোরণের জ্বালা!
– আমি যাইনি কিছুই ভুলে।
আমি রাখাল বন্ধু, তুমি রঙ্গিলা, শিমুল তলীর ছায়;
তুমি আমার বাঁশিতে বিউগল সুর মিলনের বেদনায়।
– আমি যাইনি কিছুই ভুলে?
কতদিন আর এমনি করে ¯ি¬পিং পিল খাবো?
বলে দাও পথ কেমন করে তোমাকে ভুলে রবো?
আমি পারবোনা, আমি পারবনা, আমি পারবনা সেই ছলে,
আমি থাকতে পারি না ভুলে।
ওগো বন্ধু, জানি বলবে না
বদ্ধ দুয়ার খুলবে না;
তুমি ফুলের বাসরে রঙ্গিণ আসরে গিয়েছো আমায় ভুলে,
আমি কাঁদাজলে বাউলের ছলে বিথীকার আন্চলে;
তবু যাইনি তোমায় ভুলে।
আমি যাইনি কিছু ভুলে।
আমি যাইনি কিছু ভুলে কবিতার আলোচনাঃ কবি জিয়াউল হক বিরচিত আমি যাইনি কিছু ভুলে কবিতার স্মৃতিগাঁথা বাণীকে কালের সীমায় বেঁধে রাখা যায় না। কেননা, তা এক দেশ থেকে আর এক দেশে, এক মন থেকে আর এক মনে যাতায়াত করার শক্তি রাখে। এজন্যই জগৎ জীবন সমাজ, সমষ্টিও শক্তি সত্বার মূল্যায়নে যে কবিতার আর্ট এ্যাকটিং টোন মোশন ও দেহ অবয়বের অন্তর্নিহিত ভাব, শব্দ সদ্ভারের বন্ধুরতা কানে প্রাণে ভাল লাগে তা মানুষ মনে রাখে। ভাব রস-লাইন চৌর্য বৃত্তিতে এনে আধুনিকায়নের হাইব্রিড ভাব রস লাইনে ফরমালিন মাখা থাকলে পাঠকের চাওয়া পাওয়ার পাতে দিলে তা যদি সনপাপরি মতো চুপসে যায়- তবে সে আধুনিক কবিতা সম্পর্কে জনৈক ইংরেজ সমালোচকের কথা যে, বিয়ের আগে সব বাঙ্গালিÑ ই কবিতা লেখে। কিন্তু তা কবিতা না কবিতার মত। এজন্য সকলেই কবি হয় না। ভোটে জোটে কবি বানালেও তাতে কবিতা হয় না। কবিতা একটি ফুল; কিন্তু তা যদি র্যাফলেসিয়া ফুলের মত দুর্গন্ধ ছড়িয়ে, প্রাণ সংহার করার উপকরণ ঘটায়, তাহলে অমন ফুল যে বাগানে চাষ হয়, সেই চাষিদের নাগালে পেলেও পাঠকগণ তাদের খুন করে ফেলে।
এক্ষেত্রে কবি জিয়াঊল হকের আমি যাইনি কিছু ভুলে একটি প্রণয়োপাখ্যন মূলক কবিতা যা অদম্য কামনা বাসনা ও স¦াদের নিসর্গ প্রেমের খুশবে স্মৃতিতে খুশবিত নান্দনিক। নৈসর্গিক ভাবাবেশে বিভোর কবি এ যুগের ছলনাময়ী স্বার্থান্বেষী পাষাণী আধুনিকাকে লক্ষ্য করে এক বিপ্রলব্ধ প্রেমিকের দ্বারা তাই বলিয়েছেন যে,
তুমি রাতের জোনাকি,.. আমি পথ হারা ঘন মহুয়ার বন;
তুমি আলো জ্বেলে দেখিয়েছো পথ রাঙিয়েয়েছো এই মন,
আমি যাইনি কিছু ভুলে।
চিরন্তন সামাজিক শৈলীর চোখ এড়িয়ে যৌবনিক অভিব্যক্তির প্রেরণায় দেখাদেখির ফলে, প্রেমিক প্রেমিকার প্রেম প্রণয় শুরু হয়। একসময় অভিসারে বেড়িয়ে পাত্র পাত্রী দেহজ মিলন ঘটায়। দৈহিক চাহিদা পূরণে ধনীর আধুনিকা এ ক্ষেত্রে প্রণয়ের আলো জ্বেলে উদীয়মান যুবককে ক্ষণিকের জন্য প্রলুব্ধ করে কাছে টেনে, মন রাঙ্গিয়ে, চাঙ্গা করিয়ে দিয়ে ব্যাকূল করে তোলে। কিন্তু সূযোগ বুঝে আধুনিকা কেটে পড়ে অন্য ইয়ং নিউ ফেইচের হাত ধরে ভুলে যায় পেছনের কথা। প্রথম প্রেমের মূল্য তার কাছে যেন কানাকড়ি। তবে প্রেমিক তো খাটি প্রেমিক। সে মনে প্রাণে প্রেমিকাকে স্মরণ করে আবেগময় দেলে ব্যথা ভরা মনে নিসঙ্গ জীবন কাটিয়ে মর্মভেদী দীর্ঘশ্বাসে তাকে মূল্যবান করে কাঞ্চন, মানিক রতন, হীরামন পাখি, সিরাজ নগরের কবির নায়িকা সাকির উপমায় এ প্রেমের কবিতাকে স্বার্থক করে তুলেছেন। কবি তিন নেত্রে টুয়াটারার মতই ধ্যান নয়নে দেখেছেন। কবি মাইকেল মধূসুদন দত্ত বিরচিত কৃষ্ণকুমারীকে ব্যর্থ প্রেমিকের উপমায় উপমিত করেছেন। এ কবিতায় কবি কঙ্কাবতীর গলার নব ধাতুর নির্মিত মালার মতই উপমিত করেছেন।
এখানে কবি জিয়াউল হকের সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিভাতের স্পন্দিত রুপায়ন সার্থক হয়েছে।
বিন্তু পরের তরঙ্গে ঘটনা প্রবাহের বিবর্তনে ডাইনি রুপ আধুনিকা নারীকে কবি ইদানিং, অনুষঙ্গ টেনে ব্যর্থ প্রেমিক দ্বারা বেদনার শরাঘাত করাতে বলেছেন-
আমি রাখাল বন্ধু তুমি রঙ্গিলা, শিমুল তলার ছায়;
তুমি আমার বাশিতে বিউগল সুর মিলনের বেদনায়
আমি যাইনি কিছু ভুলে।
প্রেমে ব্যর্থ চিরকুমার বাউল এক ধরণের মানসিক বিকারত্মে ভোগে । তার এ ভোগান্তির জন্য দুষ্টা নারীকে কবি ব্যর্থ প্রেমিক দ্বারা চিহ্নিত করিযে দিয়েছেন যাতে করে কোনো গরিব রাখাল এ ধরণের অসম প্রেমে জড়াতে না যায়। কবিতা বিপ্লবের চেতনার উত্তর সুরী বিদ্রোহী কবি তিরিশের দশকে দ্রোহ করে গিয়েছেনÑ যা যুগ যুগে সমধর্মীতায় কবি আহসান হাবিব, কবি ফররুখ আহমেদ এবং কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শব্দের ব্যবহার ও বিষয়াবলি দ্বারাও সে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এভাবেই পরবর্তী যুগ চেতনায় কবি বিষ্ণু দে, কবি সৈয়দ আলী আহসান সহ অন্যান্য কবিগণের মতই কবি জিয়াউল হক যুগ চেতনায় হাজার কবিতার প্রায় সবটিতেই খেয়াল রখতে সক্ষম হয়েছেন। আমি যাই নি কিছু ভুলে রোমান্টিক প্রণয়োমখ্যান কবিতার বেদনা বিদূর জ্বালায় একাকী মজনু গেয়ে উঠল,
O winter art thou go
And where am I? alone!
ওহে শীত তুই তো চলে গেলি এবং একাকী আমি কোথায় বসে আছি
অনুরুপ এ কবিতার নায়ক ও একাকী তার মনের কথা পাঠক কুলকে জানিয়ে দিয়েছে।