প্রখ্যাত ইসলামিক দার্শণিক ও চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহঃ) এর ১১ তম ইন্তেকাল বার্ষিকী

((মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ)) =
গত১৫ এপ্রিল বাদ মাগরিব উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামিক দার্শণিক ও চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহঃ) এর ১১ তম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ঝালকাঠি এর উদ্যোগে আমিরুল মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী হুজুরের সভাপতিত্বে নেছারাবাদ কমপ্লেক্স সম্মেলন কেন্দ্রে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে সমাজের বরেন্য ব্যক্তি, ওলামায়ে কেরামগন সহ ঝালকাঠি – ২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, চার উপজেলার চেয়ারম্যানবৃন্দ,ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দ, জেলার মেয়রসহ সর্বোপরি কায়েদ ভক্ত অসংখ্য জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
হুজুরের ইন্তেকাল বার্ষিকিতে আলোচকরা হজরত কায়েদ সাহেব হুজুর রঃ এর কর্মময় জীবন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বলেন পূর্ব প্রকাশের পর t হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব। তারঁ গোটা জীবন-ই আমাদের জন্য ইসলামী জেন্দেগী গঠনের এক অনন্য পাথেয়। হুজুর কেবলা (রহ.) যেমন ছিলেন একজন কামেল মুর্শিদ, ওলী, দরবেশ, সূফী সাধক ও আধ্যাত্মিক নেতা, তেমন ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, লেখক ও সংগঠক।প্রজ্ঞায়, পান্ডিত্বে. আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শবাদিতায়, সততায়, নিষ্ঠায়, উদারতায়, আমলে, আখলাকে তারঁ মত একজন মহত মানুষ সত্যিই বিরল। তারঁ জীবন ও কর্মই তাঁর বাস্তব প্রমান।পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে কিছু ক্ষণজন্মা মানুষের আবির্ভাব ঘটে। নিঃসন্দেহে মরহুম মাওলানা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন মানুষের এত বহুমুখী প্রতিভার সমনয় ঘটতে আমরা সচরাচর দেখি না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ বা ইনসানে কামিল।
ইসলামী আদর্শের সত্যিকার প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি। তাঁকে দেখলে নজরুলের কবিতার সেই পঙক্তির কথা মনে পড়ে ইসলাম সে তো পরশমানিক কে তারে পেয়েছে খুঁজি, পরশে তাহার সোনা হলো যারা তাদেরই মোরা বুঝি।’ তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে ইসলামের মহত্বের পরিচয় পাওয়া যেত, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশালতা প্রতিভাত হত।
জীবনের প্রতিটি স্তরে ছিল তাঁর সফল বিচরণ, প্রত্যেক স্তরে রেখে গেছেন তাঁর নিজস¦তা। আর এ নিজস¦তাই করেছে তাঁকে অন্য সকলের চেয়ে ; মানবকল্যাণের যে মহান ব্রত নিয়ে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে সে মানবকল্যাণই ছিল তাঁর প্রত্যেক কর্মের গন্তব্য। আর এ কারণেই ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে সব মানুষের জন্য তাঁর দ্বার ছিল উন্মুক্ত এবং সব শ্রেণীর মানুষও হয়েছে তাঁর ভক্ত ও অনুরক্ত। মানবীয় গুণাবলীর সমন¦য় ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। তিনি ছিলেন উদার, সদালাপী, পরমত সহিষ্ণু, নিরহংকার, বিনয়ী, জ্ঞানী, পরোপকারী, অতিথিপরায়ণ, অধ্যাবসায়ী, দানশীল, ক্ষমাশীল ও আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি ছিলেন সত্যিকারের মুমিন।কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পথেই তিনি তাঁর জীবন পরিচালিত করেছেন। পার্থিব ও আধ্যাত্মিকতার এক অপূর্ব সমন¦য় ঘটেছিল তাঁর জীবনে। ইলমে তাছাওফ শিক্ষা করে সে অনুযায়ী আমলী জেন্দেগী গঠণ করার জন্য হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছারছীনা শরীফের পীরে কামেল, মুজাদ্দেদে যামান আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী নেছার উদ্দিন (রহ.) এর কাছে বয়াত গ্রহণ করেন। কলকাতা আলীয়া মাদরাসায় লেখা পড়া শেষে তিনি পুনরায় চলে আসেন ছারছীনায়। ছারছীনায় এসেই হুজুর পীর ছাহেবের হাতে বয়াত গ্রহণ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই হুজুর চার তরীকায় কামালিয়াত অর্জণ করেন। ছারছীনার পীর নেছার উদ্দিন (রহ.) এর খলীফাগনের মধ্যে হুজুর অন্যতম খলীফা ছিলেন। কিন্তু তিনি কাউকে মুরীদ করতেন না। অথচ বহু মানুষ তাঁর কাছে মুরীদ হওয়ার জন্য খুব আগ্রহ পোষণ করতেন। শেষ জীবনে বিশেষ কারনে মুরীদ করেছেন। হুজুর পূর্বে কেন মুরীদ করতেনা এবং শেষ জীবনে কেন করেছেন এ সর্ম্পকে হুজুর বিগত ১৯/০৩/২০০২ ইং তারিখ নেছারাবাদের বর্ষিক মাহফিলে এক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন “আমি ছারছীনার মরহুম পীর হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.) এর নিকট চিশতিয়া, নকশাবন্দীয়া, মুজাদ্দিদিয়া ও মুহাম্মাদ্দিয়া তরিকা মশ্ক করেছি। আমি যেহেতু ছাত্র জীবন হতে ওলামা, মাশায়েখ ও ইসলামী নেতৃৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছি। আমি স্বতন্ত্র কোন ছেলছেলা জারী করলে তা আমার উদ্দেশ্য সাধনের পথে বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে। এ চিন্তা করে আমি কাউকে মুরীদ করতামনা। এখন দেখতেছি যে, কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা কেবল আমার-ই নিকট মুরীদ হতে চায়। আমি মুরীদ না করলে অন্য কারও নিকট মুরীদ হবেনা। আর আমি যে তাহরীক (আন্দোলন) চালাচ্ছি তা সফল করতে এধরনের কিছু ফেদা (উৎসর্গীত) লোক অপরিহার্য। এমত অবস্থায় আমি আমার শায়খের নিকট হতে যা শিখেছি তা অন্যকে বাতিয়ে দেয়া আবশ্যক মনে করছি। তাই অদ্য থেকে আমি তরীকার বাইয়াত গ্রহনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি”। হুজুর কেবলা ইলমে তাসাউফ অর্জণ ও তাঁর শায়খের নেক তাওয়াজ্জুহ ও বিশেষ ছোহবাতে খুব দ্র”ত তরীকতের সর্ব্বোচ্চ মাকামে পৌঁছতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। এর সুষ্পষ্ট নযির আমরা দেখতে পেয়েছি তাঁর চরিত্রে, প্রতিটি কাজ-কর্মে ও আচার-আচারণে।