একসময় পৃথিবীজুড়ে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের আধিপত্য ছিল। এছাড়া ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইতালিতেও রয়েছে রাজপরিবারের দীর্ঘ ইতিহাস। অনেক রানী-মহারানী আজো ইতিহাসের পাতায় স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে রেখেছেন। কেউ বিলাসিতার কারণে কেউ বা আবার অল্পবয়সে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে।
রানী মেরি
মাত্র ছয়দিন বয়সে মেরি স্টুয়ার্ড স্কটল্যান্ডের রানী হন। ১৫৪২ সালে আট ডিসেম্বর যখন তার জš§ হয় তখন তার পিতা পঞ্চম জেমস মৃত্যুশয্যায়। আর নয় মাস বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টার্লিং প্রাসাদে তার অভিষেক হয় যখন মেরির পক্ষে শপথবাক্য উচ্চারণ বা মাথায় মুকুট ধারণ কোনোটাই সম্ভব ছিল না।
১৪২২ সালে একই বয়সে ইংল্যান্ডের পঞ্চম হেনরিও অভিষিক্ত হয়েছিলেন রাজা হিসেবে। রানী মেরির যখন ফ্রান্সের ফ্রান্সিস ডুফিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তখন বিয়ের অনুষ্ঠানে সাদা গাউন পরিহিতা মেরিকে দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। কারণ ওই সময় সাদা রং ছিল ফ্রান্সের রানীর শোকের প্রতীক। মাত্র দুই বছরের মাথায় ফ্রান্সিস মৃত্যুবরণ করলে অনেকেই বিয়ের সাদা পোশাককে এই দুর্ঘটনার অবচেতন পূর্বাভাস বলে অভিহিত করে। মেরি অবশ্য নিজের প্রিয় রং হিসেবেই সাদা পোশাক পরেছিল।
রাশিয়ার প্রথম এলিজাবেথ
অগণিত পোশাক সংগ্রহ করে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছেন রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী প্রথম এলিজাবেথ। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৭৬২ সালে। মৃত্যুর পর তার পনেরো হাজার সেট পোশাক পাওয়া গিয়েছিল। প্রতি সন্ধ্যায় তিনি নাকি দুই থেকে তিনবার করে পোশাক পাল্টাতেন।
ক্যাথরিন দ্য গ্রেট
ক্যাথরিন দ্য গ্রেট বেহিসাবি খরচের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ছিলেন আয়েশী প্রকৃতির মানুষ। ক্যাথরিনের অভিষেক অনুষ্ঠানে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো পর্যন্ত যে শোভাযাত্রা হয়েছিল, তাতে সম্রাজ্ঞীর দরবার ও পরিষদ ১৪টি বড় ভাগে ও ২০০টি ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এ রকম একটি বড় ভাগে ছিল মিনিয়েচার প্রাসাদ। এর মধ্যে ছিল সেলুন, লাইব্রেরি ও শয়নকক্ষ। রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ১৭৮৭ সালে একবার রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার জন্য বের হন। যাত্রাপথে তিনি বিভিন্ন স্থানে সমৃদ্ধ গ্রাম ও হাসি-খুশি জনগণকে দেখে ধরে নেন তার শাসনামলে দেশের মানুষ বেশ সুখে-শান্তিতেই আছে। অথচ ক্যাথরিন জানতেই পারেননি, এগুলো ছিল তার একচোখা প্রধানমন্ত্রী জর্জ পোটেমকিনের কীর্তি।পোটেমকিন সম্রাজ্ঞীর যাত্রাপথের দুই পাশে সাময়িক কিছু গ্রাম তৈরি করান। তারপর টাকা-পয়সা দিয়ে সেখানকার লোকজনকে রাস্তাঘাট পরিষ্কার রেখে, ঘরদোর রং করে ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে হাসিমুখে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে ক্যাথরিন কখনোই জানতে পারেননি দেশের আপামর জনসাধারণ কী রকম কষ্টে আছে।
মহারানী ভিক্টোরিয়া
১৮১৯ সালে ভিক্টোরিয়া জš§গ্রহণ করেন। তার পিতামহ ও ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জের সাত ছেলে ও পাঁচ মেয়ের কারোরই কোনো সন্তান ছিল না। তাই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এদিকে ভিক্টোরিয়া ছিলেন রাজা জর্জের চতুর্থ সন্তান অ্যাডওয়ার্ডের কন্যা। চাচা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর ১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়া ইংল্যান্ডের রানী হন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ইংল্যান্ডের রানী হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর ভিক্টোরিয়ার প্রথম কাজ ছিল মায়ের কক্ষ থেকে নিজের বিছানা সরিয়ে আনা। মহারানী ভিক্টোরিয়ার মাতৃভাষা কিন্তু ইংরেজি ছিল না। তার মা ছিলেন একজন জার্মান ডিউকের কন্যা। যিনি ঘরে সবসময় জার্মান ভাষায় কথা বলতেন। যদিও ভিক্টোরিয়া ৬৪ বছর ইংল্যান্ড শাসন করেছেন। তিনি খুব ভালোভাবে ইংরেজি বলতে পারতেন না। প্রিন্স কনসর্ট মারা যাওয়ার পর চল্লিশ বছর ধরে মহারানী ভিক্টোরিয়ার একটি নির্দেশ প্রতিপালিত হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার নির্দেশ ছিল, প্রতি সন্ধ্যায় উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজপুত্রের বিছানায় তার পোশাক নতুনভাবে রাখতে হবে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের আভিজাত্য ও রাজকীয় রীতিনীতি মেনে চলেছেন এই মহারানী।
ইলেনর অব একুইটেনর
পারিবারিক কলহের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ইলেনর অব একুইটেনর। তার দশ সন্তানের মধ্যে দুই সন্তান ইংল্যান্ডের রাজা হয়েছিলেন।
হেনরি মারা যাওয়ার পর তিনি তার অন্যতম সন্তান প্রথম জনকে সিংহাসনে বসান। ইলেনরের আরেক সন্তান ক্রুসেডে যোগদান করে। সে ছিল রাজা রিচার্ড। ইলেনর নিজেও ক্রুসেডে গিয়েছিলেন।
তিনি তার নাতনির বিয়েরও আয়োজন করেছিলেন। সেই নাতনির জমকালো বিয়ের কাহিনী আজো রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়।