বাংলাদেশে ব্ল্যাক বিউটি টমেটো উৎপাদন

শান্ত পথিক//পৃথিবীর সবচেয়ে কালো টমেটোর একটি হচ্ছে ব্ল্যাক বিউটি টমেটো। দেখতে দেশি টমেটোর ভীরা সাইজ আকৃতির গায়ের রং কালোর সঙ্গে হালকা সবুজ থাকাতে টমেটোটিকে খুবই দেখতে নান্দনিক মনে হচ্ছে। এটি পৃথিবীর বিরল প্রজাতির একটি সবজি। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে এখনো বাংলাদেশে এর চাষ শুরু হয়নি। কিন্তু কুমিল্লার সৌখিন কৃষক আহমেদ জামিল সেলিম এটি চাষ করে সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম ব্ল্যাক বিউটি টমেটো উৎপাদনকারী হিসেবে নিজের নাম প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। নিজের বাসার উঠানে তিনি এ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন এই বিরল প্রজাতির টমেটো দেখতে তার বাড়িতে লোকজন ভিড় করছে।
কুমিল্লা নগরীর ৭নং ওয়ার্ডের ঠাকুরপাড়ার বাগানবাড়িতে বসবাস আহমেদ জামিল সেলিমের। তিনি বাগানবাড়ি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক। ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে এই বিরল প্রজাতির টমেটো দেখার জন্য কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের কয়েক নাগরিককে আমন্ত্রণ জানালেন তার বাসায়। সরেজমিনে দেখা গেল, একতলা বিশিষ্ট তার বাসার সামনের খালি জায়গায় পরিকল্পিতভাবে তিনি বিভিন্ন শাকসবজি ও ফল-মূলের গাছ লাগিয়েছেন। বাড়ির সামনে ফুল ফল ও সবজির বাগিচা থাকার ফলে বাড়িটিকেও অপূর্ব দেখাচ্ছে। তার বাগানে পাঁচ প্রজাতির টমেটো লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ব্ল্যাক বিউটি টমেটো, চেরী টেমেটো, টাইগার এলা টমেটো, পর্ক চপ টমেটো এবং দেশীয় প্রজাতির টেমেটো। এর মধ্যে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, ব্ল্যাক বিউটি টমেটোটি সম্ভবত এখনো বাংলাদেশের কোথায়ও বপন হয়নি। জাতটি একেবারেই নতুন আমাদের দেশে।
সৌখিন টমেটো চাষি আহমেদ জামিল সেলিম জানিয়েছেন, এটির বীজ আমেরিকার সাউথ ক্যারোলিনা থেকে তার ভাই পাঠিয়েছেন। তিনি ভালো করে মাটি প্রস্তুত করে বীজ বপন করার তিন মাসের মধ্যেই এর ফলন পেয়েছেন। কোনো রকম রাসায়নিক কেমিক্যাল তিনি ব্যবহার করেননি। সম্পূর্ণ জৈব সার দিয়ে তিনি এ চাষ করেছেন।
জানা যায়, কালো রঙের এই ব্ল্যাক বিউটি টমেটোটি খুবই মাংসাল এবং খেতে চমৎকার। এর রং এতটাই গাঢ় যে কখনো কখনো এর ত্বক পুরোপুরি চকচকে নীলচে কালো রং ধারণ করে। এর ভেতরের অংশ গাঢ় লাল এবং সবচেয়ে সুস্বাদু টমেটোগুলোর একটি। এর চমৎকার স্বাদ এবং রঙের জন্য গোটা আমেরিকায় এটি বহুল প্রশংসিত। এটির অ্যান্থোসায়ানিন ( ব্লুবেরি এবং ব্ল্যাক বেরির মতো) উৎপন্ন যেটি একে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী করে তোলে। সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে এর স্বাদ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায় এবং এটি অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই ব্ল্যাক বিউটি টমেটোর গাছ প্রায় চার ফুট লম্বা হয়। ঠিক মতো যতœ করলে এতে প্রচুর ফলন হয়ে থাকে। টমেটো পাকার জন্য রোদের প্রয়োজন হয়। তাই বসন্তকালের মাঝামাঝি সময়ে টমেটো পাকতে দেখা যায়। চমৎকার স্বাদ ও রঙের এই টমেটো নিঃসন্দেহে একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ বলে জানান কৃষি বিশেজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্যান) তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, ব্ল্যাক বিউটি টমেটোটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। সম্ভবত আমরাও আজ এটি প্রথম দেখেছি। এই টমেটো দেখে পর্যবেক্ষণ করে মনে হলো, এই জাতীয় টমেটো এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে। ক্যান্সার প্রতিরোধে এই টমেটো সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি জানান।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) আইয়ুব মাহমুদ বলেন, এই টমেটোর পুষ্টিমান অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তবে যেহেতু আমাদের দেশে এর চাষ এবারই প্রথম হলো, এখন দেখতে হবে এই সবজির ওপর পোকা মাকড়ের আক্রমণ কেমন হয়। এগুলো নিয়ে এখন আমাদের গবেষণা করতে হবে।