পেয়ারার ঔষধি গুণাগুন

মোঃ আহ্ছান উল্লাহ্//পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ফল। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস, ফোলেট, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ক্যালসিয়াম। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় কমলার চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং সংক্রমণ, প্রদাহ, ব্যথা জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় প্রভৃতি রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পেয়ারার যত উপকারিতা
পেয়ারাতে আছে অতিমাত্রায় ভিটামিন সি এবং আয়রণ। এই ভিটামিন সি এবং আয়রণ শরীরে ঠাণ্ডা জমতে দেয় না। তাই পেয়ারা খেলে খুব সহজেই ঠাণ্ডা কাশির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পেয়েরা জ্বর সারাতে খুব ভাল কাজ করে।
পেয়ারাতে আছে ভিটামিন বি৩ ও বি৬ যা মষ্তিষ্কে রক্ত চলাচল করে। মষ্তিষ্ক ফ্রেস রাখে। মষ্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও বি। যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
পেয়ারাতে আছে উপকারি ভিটামিন এ। ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে কাজ করে। ত্বকে নেচারাল ক্রিম ও টোনার জেল হিসেবে কাজ করে। পেয়ারা খেলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। ত্বককে যে কোন সমস্যা থেকে রক্ষা করে। কুচকে যাওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে ত্বক করে টানটান। পেয়ারায় আছে ভিটামিন এ,বি,সি ও পটাশিয়াম যা ত্বকে এন্টি-অক্সাইড বৃদ্ধি করে। এন্টি-অক্সাইড ত্বক উজ্জল করে ও বয়সের ছাপ দূর করে।
পেয়ারা রক্ত থেকে কলেস্ট্রোল দূর করে। অতিরিক্ত কলেস্ট্রোল দূর করার মাধ্যমে উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারায় বিদ্যমান হাই-ফাইবার রক্তের চিনি কমানোর মাধ্যমেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
পেয়ারের সব থেকে অবাক করা ও কার্যকারি উপকারিতা হচ্ছে এটি ক্যান্সারের জীবানুর বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিক পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পেয়ারা খায় তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ ভাগ কম থাকে। বিশেষ করে নারীদের স্তনের ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারা অনেক কার্যকর।
রক্তের চিনি কমানোর দারুন ক্ষমতা আছে পেয়ারাতে। যারা পেয়ারা খায় তাদের ডায়েবেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।যারা ডায়েবেটিকস রোগে আক্রান্ত তারা রোজ একটি করে পেয়ারা খেলে তাদের ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
পেট ভাল রাখতে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে। পেয়ারায় রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিস। যা ডায়ারিয়াতে বেশ ভালো কাজ দেয়।
থাইরয়েডের জন্য উপকারি কপারের খুব ভালো উত্স হচ্ছে পেয়ারা। কপার আমাদের দেহের খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা দেহের হরমোন ও অর্গান সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে।আর কপার দেহের হরমোন উত্পাদন ও শোষণকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য এবং এর পটাশিয়াম ও শক্তিশালী প্রদাহনিরামক গুণাগুণ থাইরয়েডের কাজকে উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার জন্য পেয়ারা ও পেয়ারা পাতাকে খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে নিতে হবে। এছাড়াও পেয়ারা দেহের শক্তি বৃদ্ধি ও ওজন কমানোর কাজকে সহজ করে দেয়।লগ
পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি প্রদান করে।
পেয়ারাতে লাইকোপিন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন এর মত অনেকগুলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করে। এটি প্রোসটেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
১৯৯৩ সালে “Journal of Human Hypertension” এ প্রকাশিত হয় যে নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্ত চাপ ও রক্তের লিপিড কমে। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন সি রয়েছে। পটাশিয়াম নিয়মিত হৃদস্পন্দনের এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ভাবে লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
চাইনিজ চিকিত্সা শাস্ত্ররে অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা ব্যবহার হয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে American Journal of Chinese Medicine প্রকাশ করেন যে, পেয়ারার রসে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিত্সায় খুবই কার্যকর। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারা পাতাও বেশ কার্যকর। কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে ১ কাপ গরম জলে ১ চা চামচ দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে তারপর ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন প্রতিদিন।
বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে পেয়ারা। উচ্চ পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় এটি শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়। তবে কাঁচা পেয়ারা ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখুন। কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন এ এর ভাল উত্স।