আগৈলঝাড়ায় বাল্য বিয়ের প্রভাবে নির্যাতন ও আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়েছে

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি//আগৈলঝাড়ায় বাল্য বিয়ের প্রভাবে নির্যাতন ও আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে চলেছে। গত চার দিনে পৃথক ঘটনায় বাল্য বিয়ের শিকার এক গৃহবধুর আত্মহত্যা, এক জনকে হত্যার অভিযোগ, অন্য দুই গৃহবধু নির্যাতনে শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিন বাগধা গ্রামের দাউদ হাসানের সাথে গত আট মাস আগে বাল্য বিয়ে দেয় উজিরপুরের সাতলা গ্রামের নার্গিস আক্তারের বাবা নান্নু পাইক।
স্বামী দাউদ ঢাকায় চাকুরীর সুযোগে শ্বশুর পরিবারেরর নির্যাতনের শিকার হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃত্যু বরণ করতে হয় নার্গিসকে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সন্ধার পর নার্গিসের লাশ নিয়ে ওই এলাকার লোকজন হাসপাতাল এসে প্রশাসনের ভয়ে লাশ নিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেলে এসআই নাসির উদ্দিন নার্গিসের শ্বশুর বাড়ি থেকে ওই রাতে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরিবারের দাবি, নার্গিস আত্মহত্যা করলেও একাধিক সূত্রের দাবি পাশবিক ও শারিরীক নির্যাতনে নার্গিস মারা গেছে। নার্গিসের লাশ উদ্ধারের পর ওই রাতেই থানায় প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে, ন!-১১(২৮.৩.১৯)। শুকবার সকালে লাশ মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
এদিকে দুই মাস আগে বাল্য বিয়ের শিকার হওয়ায় হাওলা গ্রামের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী জ্যাকব বাইনের মেয়ে ও সরকারী শহীদ আ. রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ডেইজীকে একই উপজেলার রাজিহার গ্রামের অসীম সরকারের সাথে সামাজিক ভাবে বিয়ে দেয়। বাল্য বিয়ের শিকার ওই ছাত্রীর সাথে অন্যত্র এক ছেলের সাথে পূর্ব সম্পর্কের জের ধরে ২৪মার্চ স্বামী-স্ত্রী’র ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায়ে ভোর রাতে ডেইজী বিষপান করে। তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিলে কর্তরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় বরিশাল কোতোয়ালী থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
এদিকে শ্বাশুরী শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের প্রবাসী ইমরান মিয়ার স্ত্রী তিন সন্তানের জননী রোজিনা বেগম (৩০) বুধবার ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। একই দিন গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের জামাল বালীর মেয়ে ও সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পরে অতি সম্প্রতি বাল্য বিয়ে দেয়। বাল্য বিয়ের শিকার সুমাইয়া আক্তার (১৬) পারিবারিক কলহের কারনে অভিমান করে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। উভয়কে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন বলেন, বাল্য বিয়ের খবর পেলেই পুলিশ তা প্রতিহত করে দেয়। নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ মেয়ে বা তার পরিবার ঘটনা পুলিশকে জানায় না। জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের সাথে অভিভাবকদের আরও তৎপর হওয়া উচিত। তাছাড়া কীটনাশকের ক্রয় ও বিক্রয়ের যথেচ্ছ ব্যবহার সীমাবদ্ধ ও ব্যবহারের পর অবশিষ্ট অংশ ফেলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।