বেপরোয়া দালালরা রোহিঙ্গা আনার কাজে মুক্তিপণ আদায়, স্বর্ণ টাকা লুটসহ রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে

0
(0)

এস এম রহামান হান্নান, স্টাফ রিপোর্টার

টেকনাফ সীমান্তের রোহিঙ্গা মানবপাচারকারী দালালরা রোহিঙ্গা পারাপারে ভাড়া আদায়ের নামে আটক মুক্তিপণ আদায়, স্বর্ণ  টাকা লুটসহ  করে এবং সাথে নিয়ে আসা গরু মহিষ আটক করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা মানবতা বিরোধী। এসব দালালরা ইতিপূর্বে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করে আসলেও ওরা অধরা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফের শামলাপুর থেকে শাহ্পরীরদ্বীপ পর্যন্ত ২০/২৫টি নৌঘাটে ২ হাজারের বেশি ফিশিং বোট রয়েছে। এসব ফিশিং বোট এখন মৎস্য শিকারের পরিবর্তে মিয়ানমার উপকূল থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই করে আনতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
২০ থেকে ৩০ জন ধারণ ক্ষমতার ছোট ছোট এই ফিশিং ট্রলারগুলো রাতের অন্ধকারে মিয়ানমার উপকূলে ভিড়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এপারে চলে আসে। আবার এসব দালালের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এক সময় মালয়েশিয়া মানবপাচারে জড়িত গডফাদারদের। আর এই গডফাদারদের রয়েছে মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের দালালদের যোগসূত্র। প্রবাসে থাকা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের লোকজন গডফাদারদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। আর এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে সমুদ্র উপকূলের মাঝি ও জেলেরা। যারা এখন দালালে পরিণত হয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দালালরা জনপ্রতি ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করছে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। যারা টাকা দিতে পারছে না অথবা টাকার পরিমাণ কম তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা, কাপড়-চোপড়সহ যাবতীয় মূল্যবান সামগ্রী। আবার পরিবারের দুই-একজন সদস্যকে বন্দি রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে দালালদের চাহিদামতো টাকা সংগ্রহ করে আনতে। শুধু তাই নই, দালালদের চাহিদামতো টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার ডুবিয়ে দেয়ার মতো নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে যাচ্ছে এই দালালরা। স্থানীয় সূত্রে এ কাজে জড়িত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলো- টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়ার ছৈয়দ মাস্টারের ছেলে আনোয়ার, কবির আহমদ, ছৈয়দ হোছনের ছেলে ইউসুপ, তার ভাই ইউনুছ ওরফে ইনিয়া, রেস্ট হাউজের শামসুল আলম, আয়ুব, আবদুল হামিদ, উঠনির লালুর ছেলে নুরুল কবির, ওবাইদুর রহমানের ছেলে রশিদ, ভুলুর ছেলে জাহাঙ্গীর, হারেছের ছেলে আক্তার হোসেন, কালা মিয়ার ছেলে রফিক, গুরা মিয়া, আনোয়ার, কবির, ছলিম উল্লাহর ছেলে কালা বদা, জালাল আহমদের ছেলে ছৈয়দ আলম, মো. উল্লাহ, এনায়েত উল্লাহ, ইলিয়াছ, মো. সালামের ছেলে ছৈয়দ নুর, জামাল আহমদের ছেলে আজিজ উল্লাহ, ছিদ্দিকের ছেলে হাফেজ আহমদ, আবদুল হামিদ, ইসমাইল, শহর মুল্লুকের ছেলে ইমাম হোসেন, কবির আহমদের ছেলে আবদুস শুক্কুর, জালিয়াপাড়ার হাছন আলী, মোস্তাক আহমদ মসু, সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া ঘাটের আবদুল গফুর, ছৈয়দ হোসেন, মৌলভী মোক্তার আহমদ, মো. ইসমাইল, মো. হাছন, কবির মেম্বার, কালামিয়া, নজির আহমদ, মো. আলী, তজিল ফকির, জাবু মাঝি, আবদুল আমিন মাঝি, হাতিয়ারঘোনার ছৈয়দ মাঝি, নূর আহমদ মাঝি, নোয়াখালী ইউনুছ, একই এলাকার আয়াছ ও মাঝি বাইট্টা হোছন, জাগির মাঝি, লম্বরী এলাকার একসময়ের মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারী জাফর, ফিরোজ, জাহালিয়ার পাড়ার বেলাল, ছিদ্দিক, কালু, মিঠাপানিরছড়ার মো. পুতু, করাচীপাড়ার মো. হোছন, আনু মিয়া, সোনা মিয়া, মৌলভী ইউনুছ, মালয়েশিয়া মানবপাচারকারী মিয়ানমার নাগরিক টেকনাফ শীলবুনিয়া পাড়ার বাসিন্দা হেফ্জ মাঝি, তার ভাই মহিবুল্লাহ মাঝি, একই এলাকার জব্বরের পুত্র আবুল কালাম মাঝি, মো. মাঝি, শাহ্পরীরদ্বীপ ডেইলপাড়ার দুদু মিয়ার পুত্র শুক্কুর, পশ্চিমপাড়ার মো. শফির পুত্র নজির আহমদ, কবির আহমদ, মাঝের পাড়ার সিরাজের পুত্র কলিমুল্লাহ, ঘোলার পাড়ার জমির উদ্দিনের পুত্র কবিরা, পূর্ব-উত্তরপাড়ার মৃত নজির আহমদের পুত্র জিয়াবুল, জালিয়া পাড়ার শামীম, পশ্চিম পাড়ার কালা ফকিরের পুত্র মো. জালাল, মিস্ত্রি পাড়ার হাসিমের ছেলে লম্বা সেলিম, জালাল আহমদের ছেলে শরীফ হোছন, নাজির হোসেন, নুর হোসেন, মৃত বশির আহমদের ছেলে এনায়েত উল্লাহ, দক্ষিণ পাড়ার মোহাম্মদ উল্লাহ মাঝির ছেলে কাউছার, আনুর ছেলে ইলিয়াছ, ছলিমের জামাতা রশিদ আমিন, নূর হোসেন, শামসু, রহমত উল্লাহ, শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়ার মৃত আলতাজ মিয়ার ছেলে শামসুল আলম হাসু, দুদু মিয়ার ছেলে নুরুল আলম, নুর মোহাম্মদের ছেলে আবু তাহের, মোজাহার মিয়ার ছেলে আকবর, আবুল কালাম, ফরিদ আলম, আলী জোহার, নুর কামাল, নুরুল ইসলাম, নুরুল আলম, নাজিমুল্লাহ নুর মাঝি, আবদুস শুকুর, আবদুল কালাম, সাইয়েদ আলম, হারুন বদি, রহিমুল্লাহ, সাবরাং নয়পাড়ার আবুল কাসেম ওরফে পুয়া কালুর ছেলে মো. আবদুল্লাহ, সাবরাং মুন্ডার ডেইল এলাকার মৃত ইউছুফ আলীর পুত্র ফজল মাঝি, কালু ফকিরের পুত্র আবদুল আমিন ওরফে লালু মাঝি, দানু মিয়া, জয়নাল, টেকনাফ মহেষখালীয়া পাড়ার রফিক মাঝি, সৈয়দুল আমিন মাঝি, হ্নীলা জাদিমুড়া এলাকায় রয়েছে আবদুল মোনাফের ছেলে আমীর হামজা, জাদিমুড়া নয়াপাড়া এলাকার লম্বা আবদুল আমিন প্রমুখ।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান জানান, রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে যারা অপরাধ করছে সে সব দালালকে ধরতে পুলিশ কাজ করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৪০ দালালকে সাজা দেয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি আরো জানান, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যারা ব্যবসা করবে তাদেরকে কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে বোট মালিক এবং জেলেদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.