শিবপুরে ও নেত্রকোনায় চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল রাম্বুটান

স্টাফ রিপোর্টার

বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষে সফল হয়েছেন নরসিংদীর শিবপুরের কৃষক জামাল উদ্দিন। তার এ সফলতা আশা জাগিয়েছে এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভাল দাম পাওয়ায় সুস্বাদু ফল রাম্বুটান চাষে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন নরসিংদীর কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে নরসিংদীর উঁচু বা টিলা
এলাকার মাটিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বিদেশী ফল রাম্বুটান। সরেজমিন গিয়ে সফল রাম্বুটান চাষী জামাল উদ্দিনসহ অন্যান্য কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৬ সালে চাকুরি শেষে ব্রুনাই থেকে দেশে ফেরার সময় নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার অষ্টআনী গ্রামের জামাল উদ্দিন সঙ্গে নিয়ে আসেন ১ কেজি রাম্বুটান ফল। রাম্বুটানগুলো খাওয়ার পর অনেকটা অপরিচিত এই বিদেশী ফল দেশের মাটিতে ফলানোর ভাবনা থেকে বীজ বপন করেন তিনি। নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় বপন করা বীজ থেকে চারা গজিয়ে উঠলে আশার আলো দেখতে পান তিনি। পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় লটকন বাগানের ভেতরে ১৭টি চারা রোপনের পর বেড়ে উঠে ৭টি গাছ। ৬ বছর পর ২০১২ ইং সালে প্রথমবারের মত তার ১টি গাছে অল্প পরিমানে ফলন আসে রাম্বুটানের। বিক্রি না করে প্রথমবারের ফলগুলো খেয়ে ফেলেন পরিবারের সদস্যরা। দ্বিতীয় বছর ১টি গাছ থেকে রাম্বুটান বিক্রি করেন ১০ হাজার টাকা। তৃতীয় বছর মোট ৩টি গাছে ফলন ধরলে বিক্রি করেন ৫০ হাজার টাকা। চতুর্থ বছর ৩টি গাছ থেকে বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকার ফল। চলতি বছর তার ৫টি গাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার রাম্বুটান বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী জামাল উদ্দিন। জামাল উদ্দিন বলেন, প্রথম প্রথম স্থানীয় বাজারে এই অপরিচিত ফলের কদর না থাকলেও এখন পরিচিত হয়ে উঠায় ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে ফলটির। ঢাকা থেকে পাইকাররাও রাম্বুটান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। দেশে অনেকটা অপরিচিত এই বিদেশী ফল স্থানীয় বাজারে ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা কেজি ও প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকা হলে লাল রঙ ধারণ করে রাম্বটান। দেখতে অনেকটা কদম ফুলের মতো। ফলের উপরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের অংশটা দেখতে লিচুর মতো, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। খেতে সুস্বাদু এই রাম্বুটান বাড়ী থেকেও কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। খবর পেয়ে প্রায়ই বিদেশী এই ফলের গাছ দেখতে কৃষক জামাল উদ্দিনের বাড়ীতে আসছেন এলাকার আগ্রহী অন্যান্য কৃষকরা। এরই মধ্যে স্থানীয় নার্সারীগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে রাম্বুটানের চারা। কৃষক জামালের সফলতা দেখে এসব চারা সংগ্রহ করছেন অন্যান্য কৃষকরাও। রাম্বুটান চাষে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। একই গ্রামের অপর কৃষক রজব আলী বলেন, রাম্বুটান চাষ করে স্থানীয়ভাবে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক জামাল উদ্দিন। তার এ সফলতা দেখে আমারও রাম্বুটানের বাগান করার ইচ্ছা জেগেছে। এরই মধ্যে বেশকিছু সংখ্যক চারা রোপন করেছি। অপর কৃষক মজনু মিয়া বলেন, আমি দেখাদেখি একটি চারা নিয়ে রোপন করেছিলাম। চলতি বছর ১০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো। কৃষক আবু সিদ্দিক মিয়া বলেন, খরচের তুলনায় রাম্বুটান চাষ লাভজনক হবে বলে মনে হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ২ থেকে ৩শত টাকায় নার্সারীতে চারাও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফলন ঝড়ে পড়ার একটু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, মোঃ লতাফত হোসেন বলেন, লটকন সমৃদ্ধ এলাকায় রাম্বুটান চাষে কৃষক জামাল উদ্দিনের সফলতার ফলে স্থানীয়ভাবে নতুন একটি বিদেশী ফল যুক্ত হতে যাচ্ছে। এতে নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হওয়ায় কৃষকরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে পারবেন। সাধারণত উঁচু এলাকা রাম্বুটান চাষের উপযোগী জানিয়ে তিনি বলেন, রাম্বুটান চাষ সম্প্রসারণের জন্য জেলাব্যাপী কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

জনপ্রিয় ফল রাম্বুটান চাষ হচ্ছে এখন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ও জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের উসমান গণি তার নিজ বাড়িতে ১৯৯৩ সালে রাম্বুটান ফলের চাষ শুরু করেন। আর তা থেকেই বর্তমানে রাম্বুটান ফল চাষের অন্যতম একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পান উসমান গণি।

কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস ও কম্বোডিয়ায় রাম্বুটান ফলের জনপ্রিয়তার কারণে ওইসব দেশে প্রচুর পরিমাণে রাম্বুটান চাষাবাদ হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nephelium lappaceum.